🎯 সাবহেডিং: ২০২৫-২৬ সালের budget of bangladesh সম্পর্কিত আয়, ব্যয় ও ঘাটতির বিশ্লেষণ
budget of bangladesh ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। চলতি অর্থবছরের তুলনায় এটি ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই প্রথম কোনো অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সংকেত দিচ্ছে ব্যয় সংকোচনের, অন্যদিকে প্রকাশ করছে বৈশ্বিক আর্থিক চাপে দেশের লড়াইয়ের চিত্র।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর প্রথম বাজেট budget of bangladesh বক্তৃতায় জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন যে এই বাজেট হবে গণমুখী, যেখানে সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্য হ্রাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে—এই বাজেটে ঘাটতির অঙ্ক বিশাল। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা এবং অনুদানসহ মোট ঘাটতি ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। সরকার মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার আশায় রয়েছে। অর্থাৎ ঘাটতির সিংহভাগই পূরণ করতে হবে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে।
এই বিশাল ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা আগের ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে, ফলে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে নেওয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকারের আয় করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২,৫০০ কোটি টাকা।
ঋণের সুদের বোঝাও এবার আগের চেয়ে ভারী। এই বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের সুদ পরিশোধে দেশের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজস্ব আয় বাড়াতে এবারের budget of bangladesh-এ নির্ধারিত হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ১৯ হাজার কোটি এবং কর ছাড়া আয় ৪৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে এত বড় আয়ের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে কীভাবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা মেলেনি। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য বাড়া, আমদানি শুল্কের পরিবর্তন ও কর কাঠামোর জটিলতা রাজস্ব আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ব্যয় কাঠামোর দিক থেকে দেখা যায়, পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, যা মূলত বেতন, ভাতা, সুদ পরিশোধ ইত্যাদি খাতে ব্যয় হবে। মূলধন ব্যয়ের জন্য ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, যা উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
উন্নয়ন বাজেটেও এবার কিছুটা রূপান্তর দেখা যাচ্ছে।budget of bangladesh মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, স্কিমভিত্তিক ব্যয় ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা এবং বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। এছাড়া, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি এবং স্থানান্তর খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরাসরি জনগণের সেবা ও জীবিকা সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বাজেট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক প্রভাবকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। তবে budget of bangladesh বাজেটের সাফল্য নির্ভর করবে এর বাস্তবায়ন কাঠামোর উপর। যেসব খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার না হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি নাও আসতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও তরুণ উদ্যোক্তা খাতে যদি বরাদ্দ যথাযথভাবে কাজে না লাগে, তাহলে বাজেটের প্রভাব খুবই সীমিত থেকে যাবে।
বছরের পর বছর সাধারণ মানুষ একটি বাজেটের জন্য অপেক্ষা করে, যেখানে থাকবে নতুন আশার বার্তা, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এবারের budget of bangladesh যেন সেই প্রত্যাশায় ভাটা ফেলেছে। বাজেটের আকার কমানো, ঋণের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং সুদের বিশাল বোঝা জনসাধারণের মনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও কর কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় আরও বাড়বে কি না—সেই প্রশ্ন এখন সবার মনে।
এই বাজেট শুধুই সংখ্যার খেলা নয়, এটি আপনার জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে সরাসরি। তাই এখনই জেনে নিন ২০২৫-২৬ সালের budget of bangladesh সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ, এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন পরিবর্তনের জন্য।