আপনি কি জানেন, কোরআন কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে সংরক্ষিত ও মুখস্থ করা বই?
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক মানুষ হৃদয়ে ধারণ করেছেন, সেটির সংকলন ও সংরক্ষণের ইতিহাস এক বিস্ময়কর অধ্যায়। এটি কেবল ধর্মীয়ভাবে নয়, ঐতিহাসিকভাবেও অনন্য। কিভাবে এই মহাগ্রন্থ সংরক্ষিত হলো? কিভাবে তা পৌঁছেছে আজকের বিশ্বে? চলুন জেনে নিই এক মহামূল্যবান ইতিহাস।
কোরআন সংকলনের শুরু: মুখস্থ থেকে লিখিত রূপে
প্রথম থেকেই কোরআন সংরক্ষণের দুটি মূল পদ্ধতি ছিল—মুখস্থ এবং লিখিত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় ওহির মাধ্যমে আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই সাহাবিরা তা মুখস্থ করতেন এবং রাসুল (সা.) ওহি লেখকদের নির্দেশ দিতেন তা লিখে রাখতে। সেই সময় খেজুরের পাতা, চামড়া, পশুর হাড় এবং পাথরের ওপর কোরআনের আয়াত লেখা হতো।
রাসুল (সা.)-এর যুগেই অসংখ্য সাহাবি পুরো কোরআন মুখস্থ করেছিলেন। হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আয়েশা (রা.)-সহ আরও অনেকেই ছিলেন হাফেজে কোরআন।
আবু বকর (রা.)-এর যুগে কোরআনের সংকলন
রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ইমামার যুদ্ধে বহু হাফেজ শহীদ হন। এতে আশঙ্কা দেখা দেয়, যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে মুখস্থকারীদের অনুপস্থিতিতে কোরআনের আয়াত হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন হজরত ওমর (রা.)-এর পরামর্শে প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) কোরআন সংকলনের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতকে (রা.) দায়িত্ব দেন কোরআনের আয়াত একত্রিত করে লিখিত রূপে সংকলন করতে। জায়েদ (রা.) কেবল নিজের মুখস্থ বিদ্যা অনুসারে নয়, বরং প্রত্যেকটি আয়াত দুইজন নির্ভরযোগ্য সাক্ষীর মাধ্যমে যাচাই করে সংকলন করেন।
এভাবে কোরআনের প্রথম লিখিত সংস্করণ সম্পন্ন হয়, যা সংরক্ষিত ছিল খলিফাদের কাছে।
উসমান (রা.)-এর যুগে কোরআনের প্রতিলিপি
হজরত উসমান (রা.)-এর সময়ে মুসলিমরা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। একসময় দেখা গেল, বিভিন্ন স্থানের মুসলমানরা বিভিন্ন উচ্চারণে কোরআন পাঠ করছেন, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
তখন উসমান (রা.) কোরআনের একটি নির্দিষ্ট পাঠ রূপ নির্ধারণ করেন এবং সেটির প্রতিলিপি তৈরি করে বিভিন্ন ইসলামী রাজ্যে পাঠিয়ে দেন। এই সংকলনকৃত কোরআনকেই ‘উসমানি মুসহাফ’ বলা হয়, যা আজও অবিকল একই রয়ে গেছে।
কোরআন সংরক্ষণের অলৌকিকতা
কোরআন এমন এক গ্রন্থ, যা ১৪০০ বছর ধরে একটুও পরিবর্তিত হয়নি। এটি লিখিত সংকলন ছাড়াও লক্ষাধিক হাফেজের স্মৃতিতে অক্ষুন্ন রয়েছে। পৃথিবীর কোনো গ্রন্থ এত মানুষের হৃদয়ে সংরক্ষিত হয়নি।
আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন:
“আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই একে রক্ষা করব।” (সুরা হিজর: ৯)
আপনার করণীয় কী?
আপনি কি জানেন, কোরআন সংরক্ষণে আপনারও ভূমিকা আছে? প্রতিদিন কিছু আয়াত মুখস্থ করুন, এর অর্থ জানুন এবং অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
📖 আপনার প্রতিদিনের জীবনে কোরআনের গুরুত্ব কেমন? কমেন্টে জানান!
খবর ৩৬৫ দিন, স্টাফ রিপোর্ট