আপনি কি জানেন ‘৩৬ জুলাই’ বলতে আসলে কী বোঝায়? আর কেন ৫ আগস্টকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করা হয়?
৫ আগস্ট কি দিবস: ‘৩৬ জুলাই’ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠা একটি সাহসী ইতিহাস
📜 ৫ আগস্ট কি দিবস?
৫ আগস্ট কি দিবস – ৫ আগস্ট এখন আর শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি ‘জুলাই গণ‑অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যায় এক গর্জনময় আন্দোলন—যা ব্যতিক্রমধর্মী এক সময়কালকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘৩৬ জুলাই’।
📆 ‘৩৬ জুলাই’ কী এবং কেন এই নাম?
৫ আগস্ট কি দিবস ?২০২৪ সালের জুলাই মাসে ধারাবাহিক আন্দোলনের শেষ দিনটি ছিল ৫ আগস্ট। চরম উত্তেজনাকর সেই সময়কালকে প্রতীকীভাবে ‘৩৬ জুলাই’ নামে আখ্যায়িত করা হয়, যা বোঝায় একটি অতিরিক্ত বা ফুঁসে ওঠা সময়—যা ক্যালেন্ডারের বাইরে গিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছে।
🏛️ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ঘোষণা হয় কখন?
২০২৪ সালে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় যে ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ‑অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আসে রাজনৈতিক চাপ, ছাত্র আন্দোলন এবং ইতিহাসকে সম্মান জানানোর অংশ হিসেবে।
🎯 আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও দাবি
এই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এ। মূলত নিয়োগবিধি, চাকরির কোটা বৈষম্য ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
🔥 কতজন গ্রেপ্তার ও হতাহত হয়?
আনুমানিক ৭৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। বহু নেতৃস্থানীয় ছাত্র নেতাকেও আটক করা হয়। রাস্তায় গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসে পরিণত হয় এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে।
🌐 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ
এই সময়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চিকিৎসার উদ্দেশ্যে’ জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে যান বলে জানানো হয়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি ছিল আন্দোলনের চাপ সামাল দিতে কৌশলগত একটি সিদ্ধান্ত।
🏛️ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
এই সময় একটি রাষ্ট্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস কে অস্থায়ী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
🧭 ৫ আগস্ট ও ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’: ইতিহাসের পেছনের ইতিহাস
৫ আগস্ট কি দিবস—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০২৩ সালের উত্তাল জুলাই মাসে। এ সময় বাংলাদেশে ন্যায্যতা, চাকরির সমান সুযোগ, ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দাবিতে দেশজুড়ে এক অভূতপূর্ব ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।
৫ আগস্ট কি দিবস – এটা বিশেষ করে কোটা সংস্কার, নিয়োগ-বিধির বৈষম্য ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন রূপ নেয় গণ-প্রতিরোধে।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ৩১ জুলাই পার হয়ে গিয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গড়ায়। তখন অনেকেই প্রতীকীভাবে বলেছিলেন—এই দিনটি ক্যালেন্ডারের বাইরে একটি সময়, যার নাম রাখা হয় “৩৬ জুলাই”।
🏛️ কেন ৫ আগস্টকে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস” হিসেবে নির্বাচন করা হয়?
৫ আগস্টে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ, গণগ্রেপ্তার ও ছাত্র-জনতার মিলিত গর্জন এই দিনটিকে অন্যসব দিনের চেয়ে আলাদা করে তোলে।
এ দিন ঢাকার রাজপথে লাখো শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে, প্রশাসন ব্যস্ত থাকে কঠোর নিরাপত্তায়, আর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে “জুলাই বিপ্লব” শব্দটি।
সেই ঐতিহাসিক আবহকে সম্মান জানিয়ে ২০২৪ সালে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, ৫ আগস্ট থেকে প্রতি বছর পালিত হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’।
🔥 আন্দোলনের তীব্রতা ও ফলাফল
এই আন্দোলনের সময় প্রায় ৩০০ এর বেশি শিক্ষার্থী আহত হন এবং ৭৫০ জনের মতো আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্রনেতাদের উপর নজরদারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে অভিযান, সাংবাদিকদের ওপর হামলা—সব মিলিয়ে পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
🌍 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ যাত্রা ও অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা
এই আন্দোলনের চূড়ান্ত সময়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে যান। যদিও তা বলা হয় চিকিৎসাজনিত, তবে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের কাছে তা ছিল রাজনৈতিক চাপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কৌশল।
এরই মাঝে দেশের প্রশাসন পরিচালনার জন্য গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং একটি নিরপেক্ষ সংলাপ ও রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান।
✊ একটি প্রজন্মের জাগরণ
এই আন্দোলন ছিল শুধু একটি কোটা সংস্কারের আন্দোলন নয়, এটি ছিল একটি প্রজন্মের আত্মচেতনার অভ্যুত্থান। ৫ আগস্ট তাই কেবল একটি তারিখ নয়—এটি গণচেতনার প্রতীক, অসমতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা সাহসের দিন।
🧠 আবেগগত ট্রিগার:
-
আপনি কি এমন একটি দিনের কথা জানেন, যা ক্যালেন্ডারে নেই কিন্তু মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী?
-
বৈষম্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে গর্জে উঠার এই সাহস দেখাতে পারবেন?