আপনি কি কখনো ভেবেছেন, আজ যা লিখছেন বা বলছেন, তা কি আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে? আপনার ফেসবুক পোস্ট বা একটি সাধারণ মতামত কি আপনাকে কারাগারে নিয়ে যেতে পারে?
২০১৮ সালে বাংলাদেশের সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে। সরকার বলছে, এটি সাইবার অপরাধ দমন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, এই আইন কি জনগণের সুরক্ষার জন্য, নাকি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার হাতিয়ার?
কেন এই আইন এত বিতর্কিত?
প্রথম থেকেই সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই আইনকে বাক-স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। সমালোচকরা বলছেন, আইনের ২১, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩২ ধারা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
- ধারা ২৫: কোনো ব্যক্তি যদি আক্রমণাত্মক বা মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, তবে ৩ বছরের জেল বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা।
- ধারা ২৭: রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত ডিজিটাল কার্যকলাপে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা।
- ধারা ২৮: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তি ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা।
- ধারা ৩২: বেআইনিভাবে সরকারি গোপন তথ্য সংগ্রহ করলে ১৪ বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।
এই ধারা গুলো কতটা কার্যকর, আর কতটা অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে?
প্রভাব ও বিতর্ক: কারা পড়ছে ফাঁদে?
২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন এই আইনের আওতায়। সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ অনেকেই মত প্রকাশের কারণে আইনি জটিলতায় পড়েছেন।
২০২১ সালে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তিনি শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশ করার কারণে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান।
সাইবার নিরাপত্তা আইন: আসলেই কি পরিবর্তন এসেছে?
২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন পাস করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন আইনে অনেক ধারা শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে? নাকি এটি নতুন নামে পুরোনো শাসনব্যবস্থারই আরেকটি সংস্করণ?
📢 আপনার মতামত দিন!
আপনি কি মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমাদের রক্ষা করছে, নাকি এটি আমাদের কণ্ঠ রোধ করছে? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন বা শেয়ার করুন!
খবর ৩৬৫ দিন, স্টাফ রিপোর্ট