আপনি কি জানেন, শুরুর বছরেই যদি এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া যেত—আপনার ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত হতে পারত?
এইচপিভি ভ্যাকসিন: কার্যকারিতা, দিকনির্দেশনা ও বাংলাদেশে প্রয়োগ
📚 এইচপিভি ভ্যাকসিন কী?
এইচপিভি বা HPV vaccine হলো এমন একটি টিকা যা Human Papillomavirus (HPV) থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কাজ করে।
এই ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের হয় এবং কিছু ধরন গির্দনের ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিল রোগের কারণ।
🛡️ কোন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে?
এইচপিভি ভ্যাকসিন মূলত নিচের রোগ ও জটিলতা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়:
-
গির্দনের (cervical) ক্যান্সার
-
যোনিমার্গ (vaginal) ও যোনিপথক্যান্সার
-
অ্যানাল ক্যান্সার
-
লালচে, শুক্রাণুঘা ও অন্যান্য জেনিটাল ওয়ার্টস
-
পুরুষদের ক্ষেত্রে যোনি-পথ, লিঙ্গ ও গলা সংক্রান্ত কিছু ক্যান্সার
👤 কাকে দেওয়া হবে & কত বয়সে?
-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করে ৯–১৪ বছর বয়সের মেয়েদের মধ্যে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হোক কারণ এই বয়সের আগে অনেকেই যৌন সংস্পর্শে আসেনি।
-
১৫–২০ বছর বয়সীদের মধ্যে যখন নিতে হবে, তাদেরও দুই ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
-
২১ বছরের বেশি হলে সাধারণত তিন ডোজের শিডিউল প্রযোজ্য।
-
ছেলেদের ক্ষেত্রেও HPV ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত — কারণ তারা ভাইরাস সংক্রমণ প্রেরণ বা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
💉 মেয়েদের জন্য HPV ভ্যাকসিন কত ডোজে?
সাধারণত ২ ডোজ দেওয়া হয় যদি প্রথম ডোজ ১৫ বছরের আগেই দেওয়া হয়।
১৫ বছর বা তার বেশি বয়স হলে ৩ ডোজ দেওয়া হয় — প্রথম, এক বা দুই মাস পরে দ্বিতীয়, এবং ছয় মাস পরে তৃতীয়।
বাংলাদেশে HPV ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়?
-
বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগে ১.৫ মিলিয়নের বেশি মেয়েকে এক ডোজ HPV ভ্যাকসিন দিয়েছিল।
-
২০২৪ সালে এটি দেশে রুটিন টিকাদান প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
-
আগামীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নির্ধারিত কেন্দ্রগুলিতে মেয়েরা বিনামূল্যে HPV টিকা পাবে।
-
NGO/স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন Marie Stopes Bangladesh এইচপিভি ভ্যাকসিন সেবা দেয়।
⚠️ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সাবধানতা
-
সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: টিকা সাইটে ব্যথা, শোথ, লালচে ভাব
-
কিছু ক্ষেত্রে জ্বালা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেশীতে ব্যথা হতে পারে
-
গর্ভবতী মহিলা জন্য সাধারণত সুপারিশ করা হয় না — টিকা গর্ভাবস্থার সময় নয়
-
টিকা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণ করাই ভালো — যাদের গুরুতর অ্যালার্জি বা রোগ রয়েছে তাদের বিশেষ সাবধান থাকতে হবে
🌱 বিশ্লেষণ ও পরামর্শ
এইচপিভি ভ্যাকসিন হলো এক ধরনের রোগ প্রতিরোধের অগ্রগামী পদক্ষেপ, বিশেষ করে গির্দনের ক্যান্সার প্রতিরোধে।
যদি এইচপিভি টিকা যথাসময়ে নেওয়া হয়, অনেক ধরনের ক্যান্সার ও জটিলতা থেকে বাঁচা সম্ভব।
বাংলাদেশে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থনে জাতীয় টিকাদান প্রোগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
তবুও, জ্ঞান, সচেতনতা ও ইতিবাচক মনোভাব না থাকলে টিকা গ্রহণ কম হবে। গবেষণায় দেখা গেছে—জনগণের গ্রহণযোগ্যতা (acceptance) ভালো থাকলে টিকা কার্যকারিতা ও সফলতা বাড়ে।